নব্বইয়ের দশকে মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করে কোটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

এত বছরেও এই নায়কের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। সালমান শাহর মৃত্যুর পর ঢাকার রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছিল। তবে, গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম ওই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দায়ের করা মামলাটিতে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন তার সহঅভিনেতা শাবনূর। আজ সোমবার বিকেলে তিনি লেখেন, 'আবারো সালমান শাহ প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা! ২৯ বছর আগে কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ২১ অক্টোবর রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থানকালীন আমি সংবাদমাধ্যমের খবরে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি।'

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী বর্তমানে অস্টেলিয়ায় বসবাস করেন।

অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে শাবনূর লেখেন, 'অনেকেই এ বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চাইছেন। তবে যেহেতু বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, তাই শুরুতে এ নিয়ে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে সালমান শাহ সংক্রান্ত এই মামলার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভ্রান্ত প্রচার ছড়াচ্ছেন। আমার সম্পর্কে ভিত্তিহীন এসব গুজব ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সবাইকে অনুরোধ করছি সত্যতা বিবর্জিত ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন।'

সালমান শাহ প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, 'সালমান শাহ ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সালমান ছিল একজন জনপ্রিয়, অসাধারণ শক্তিমান এবং প্রতিভাবান অভিনেতা। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তাঁর সঙ্গে কাজ করে আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার বিকশিত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।'

'সালমান শাহর অকাল মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমাদের জুটির সাফল্য একসময় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কেউ হয়তোবা নিজেদের বাঁচাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। আমাদের নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, যা আমাকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে আঘাত করেছে,' যোগ করেন তিনি।

সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, 'আজও আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—সালমান শাহ কিভাবে মারা গেছে তা আমি সত্যিই জানি না। আমি শুধু তাঁর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। যে-ই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়—এটাই আমার একান্ত দাবি ও প্রত্যাশা।'

সালমানের মায়ের উদ্দেশে শাবনূর বলেন, 'সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা সালমানের মা নীলা আন্টির আহাজারি দেখলেই অনুভব করতে পারি। আমি আন্টি এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং সর্বোপরি সালমান শাহর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।'