'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করেন মৌসুমী। এরপর কেবলই তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সালমান শাহ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। সিনেমা পরিচালনাও করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ঢালিউডের অন্যতম সফল নায়িকা তিনি।

৩ নভেম্বর মৌসুমীর জন্মদিন।

সাংবাদিকতার সুবাদে দীর্ঘদিন তাকে কাছ থেকে দেখেছি। কখনো এফডিসি, কখনো শুটিং হাইস, কখনো বা তার বাসায়। তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার উপস্থিত থাকার সুযোগও হয়েছে।

কোনো এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত থেকে কিছু স্মৃতি তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।

উত্তরায় একবার মৌসুমীর জন্মদিনের আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল হওয়ার আগেই শুভাঙ্ক্ষীদের আগমন ঘটতে শুরু করে সেদিন। গণমাধ্যমকর্মীরাও আসেন।

মৌসুমী ও ওমর সানী পরিবার নিয়ে আসেন। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতেই 'শুভ জন্মদিন' বলে সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানায়। তিনিও চিরাচরিত মিষ্টি হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শোবিজের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শাবনূর-ইলিয়াস কাঞ্চন-অমিত হাসানসহ একে একে তারকারা আসতে শুরু করেন।

এরপর আসে কেক কাটার পালা। মৌসুমী তার স্বামী নায়ক ওমর সানী এবং চলচ্চিত্র তারকাদের নিয়ে কেক কাটেন।

সবার উদ্দেশে মৌসুমী বলেন, সবার ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা। বিশেষ দিনে যারা এসেছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, চিরদিন মনে রাখব।

শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। অন্যদিকে তারকারা কেউ কেউ গান পরিবেশন করেন। এক পর্যায়ে শাবনূরও গান করেন।

খাওয়া, আড্ডা, গান—দীর্ঘ সময় ধরে চলে। রাত বাড়ার পরও কোনো কোনো তারকা উপস্থিত হন।

এত ভিড়ের মধ্যেও হাসিমুখে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, সবার খোঁজ নেন এই নায়িকা।

রাত ১১টার পর বেশিরভাগ তারকারা চলে যান। ওমর সানী, মৌসুমী, তাদের দুই সন্তান ও ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ রয়ে গেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আরও ছিলেন ফটোগ্রাফার আলিফ রিফাত।

এক ফাঁকে মৌসুমীর কাছে জানতে চাই, জন্মদিন এলে কেমন লাগে?

তিনি বললেন, এত মানুষের ভালোবাসা সত্যিই ভালো লাগে। জন্মদিনে মানুষের ভালোবাসা বেশি করে টের পাওয়া যায়। সাত্যিই অন্যরকম লাগে। মানুষের ভালোবাসা ছাড়া জীবন মূল্যহীন।

প্রশ্ন করি, 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার কথা এখনো অনেকেই বলেন। কেমন লাগে?

তিনি বললেন, এটা তো অনেক বড় পাওয়া। আমার ও সালমান শাহ অভিনীত এই সিনেমা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা। যেখানেই যাই এই সিনেমার কথা উঠে আসে।

ক্যারিয়ারের শুরুর সময় শুটিং ব্যস্ততা কতটা ছিল?

তিনি বললেন, সেই সময়ের শুটিং ব্যস্ততার কথা বলে শেষ করা যাবে না। দিন-রাত শুটিং হতো। কখনো কখনো দুই শিফটে শুটিং করেছি। আনন্দ নিয়ে অভিনয় করেছি। ভালোবাসা ছিল কাজের প্রতি।

সালমান শাহর কথা জানতে চাইলে মৌসুমী বলেন, সালমান শাহ ছিল আমার ভালো বন্ধু। সহশিল্পীর বাইরে আমরা অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। সালমান শাহ আমার ছোটবেলার বন্ধু। খুলনায় যখন সে পড়ত, তখন থেকেই পরিচয়। যদিও তারপর দীর্ঘদিন দেখা হয়নি আমাদের। 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমা করার সময় নতুন করে দেখা হয়। আমি ডাকতাম ইমন নামে।

গল্প শেষ হয়। রাত বাড়ে।

ফুলে ফুলে ভরে গেছে একটি রুম। মৌসুমী বললেন, তোমরা কিছু ফুল নিয়ে যাও?

আমরা কিছু ফুল নিয়ে মৌসুমী ও ওমর সানীর কাছ থেকে বিদায় নিই। যাওয়ার সময় মৌসুমী বললেন, জন্মদিনটি আনন্দে কাটলো। তোমরা এসেছিলে খুশি হয়েছি। একদিন বাসায় এসো, আড্ডা দেবো।

বিদায় নিয়ে উত্তরার রাস্তায় পা রাখি আর ফিরে যাই স্কুল জীবনে দেখা সেই দিনটিতে, যেদিন প্রচন্ড ভিড় ঠেলে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমাটি দেখেছিলাম।