১৯৮৫ সালে জন্ম নেয় যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ব্যান্ড রেডিওহেড। ১৯৯৩ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম 'পাবলো হানি' ও সেই অ্যালবামের গান 'ক্রিপ' বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। আজও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কনসার্টের অন্যতম আকর্ষণ থাকে সেই 'আ'ম আ ক্রিপ' লিরিক্স।

রেডিওহেডকে অনেকেই অল্টারনেটিভ রকের পথিকৃৎ হিসেবে দেখেন। 

২০১৬ সালে সর্বশেষ অ্যালবাম রিলিজের পর দীর্ঘদিন চুপচাপ ছিল ব্যান্ডটি। সম্প্রতি তারা নতুন করে বিভিন্ন দেশে কনসার্ট করার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে এ প্রসঙ্গে ব্যান্ডের ফ্রন্টম্যান থম ইয়র্কের অবস্থান স্পষ্ট—ইসরায়েলের পাঁচ হাজার মাইলের মধ্যেও রেডিওহেড যেতে চায় না।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

আনুষ্ঠানিকভাবে রেডিওহেডের কোনো দলনেতা নেই। তবে থম ইয়র্ককেই দলনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি তিনি এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, রেডিওহেড এ মুহূর্তে ইসরায়েলে কোনো কনসার্টে অংশ নেবে না।

তবে আট বছর আগে ইসরায়েলি-বিরোধী বিক্ষোভের মুখেও তেল আবিবে কনসার্টে অংশ নিয়েছিল ব্যান্ডটি।

ইসরায়েলে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে থম বলেন, 'একেবারেই নয়। আমি (বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহুর প্রশাসনের পাঁচ হাজার মাইলের ধারেকাছেও যেতে চাই না।'

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফর্মুলা অনুযায়ী ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও এর বাস্তবায়নের আগে এই সাক্ষাৎকার দেন থম।

সাত বছর পর রেডিওহেড নতুন করে ট্যুর করতে যাচ্ছে। নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া এই ট্যুরে ইউরোপের পাঁচ শহরে ২০টি কনসার্টে অংশ নেবে ব্যান্ডটি।

সর্বশেষ ২০১৬-২০১৮ সালের 'আ মুন শেইপড পুল' ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে তেল আবিবে সঙ্গীত পরিবেশন করে রেডিওহেড। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হয় ব্যান্ডটি।

সাক্ষাৎকারে ওই কনসার্ট নিয়ে অনুতাপ প্রকাশ করেন থম। তিনি জানান, কনসার্টের পর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলি নাগরিক তাদের হোটেলে এসে কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানায়। এই ঘটনা তাকে 'হতবাক' করেছিল বলে উল্লেখ করেন থম।

ওই ঘটনার পর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ বিভিন্ন সময়ে রেডিওহেডের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে। 

গত বছর অস্ট্রেলিয়ার একটি অনুষ্ঠানে একক শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থম। গানের মাঝে এক ফিলিস্তিনপন্থি ব্যক্তি বলে ওঠেন, 'আর কত শিশু মারা গেলে আপনি গাজার গণহত্যার প্রতি নিন্দা জানাবেন?'

পরবর্তীতে ওই ঘটনার জেরে মে মাসে থম ইয়র্ক একটি বিবৃতি দেন। তিনি উল্লেখ করেন, ওই ফিলিস্তিনপন্থি ব্যক্তির কথায় তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন।

থম উল্লেখ করেন, কেউ তার নীরবতাকে (ইসরায়েলের গণহত্যামূলক কার্যক্রমের প্রতি) সমর্থন হিসেবে ধরে নিতে পারেন—এটা তিনি কখনোই ভাবেননি।   

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। ওই হামলার অংশ হিসেবে নোভা ফেস্টিভেল নামে একটি কনসার্টেও হামলা হয়। সব মিলিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন ও হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

সেদিনই প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রায় দুই বছরের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ উদ্যোগে ১০ অক্টোবর থেকে চালু হয় যুদ্ধবিরতি। তবে এই খবর শোনার আগেই থম ইয়র্ক নেতানিয়াহুর প্রশাসন নিয়ে ওই মন্তব্য করেন ও ইসরায়েলে কনসার্ট না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।